খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষক লাঞ্ছনা ঘটনার প্রায় আট মাস পর অবশেষে প্রশাসন পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও আরও ৩২ জনকে সতর্ক করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে ব্যাপক বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে কিছু শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটির পরপরই কুয়েট প্রশাসন তদন্তে নামে এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের বৈঠকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ভিডিও ফুটেজ, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
তদন্তের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও ৩২ জনকে সতর্ক করে দেয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ‘অন্যায্য’ ও ‘একপাক্ষিক’ বলে দাবি করছেন। শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, ঘটনার পেছনে বাহিরের কিছু দুর্বৃত্তেরও হাত ছিল, যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন, মানববন্ধন ও অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। তারা দাবি করেছেন— ২৮ ফেব্রুয়ারির হামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, দোষীদের শাস্তি, সেশনজট নিরসন, দ্রুত রেজাল্ট প্রকাশ ও ২২ জন শিক্ষার্থীর নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
অন্যদিকে, শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ‘প্রহসনের বিচার’ ছাড়া কিছু নয়। তাদের দাবি, প্রকৃত তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে দায় চাপানো হয়েছে, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ আরও নষ্ট হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কুয়েট প্রশাসনের উচিত ছিল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যাতে কোনো শিক্ষার্থী অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ এখনো উত্তপ্ত রয়েছে, আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র অসন্তোষ ও অনিশ্চয়তা।