বুটেক্সে রাজনীতিমুক্ত হওয়ার বর্ষপূর্তি

সানজানা শওকত
আনন্দ মিছিল, বৃক্ষরোপণ ও মিষ্টি বিতরণ । ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
আনন্দ মিছিল, বৃক্ষরোপণ ও মিষ্টি বিতরণ । ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) রাজনীতিমুক্ত হওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দ মিছিল, বৃক্ষরোপণ ও মিষ্টি বিতরণ বুটেক্সের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিষ্টি বিতরণ কার্যক্রমটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।৮ আগস্ট (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে কর্মসূচি শুরু করে।প্রথমে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে আনন্দ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। এই সময় 'ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা এই বুটেক্সে হবে না', 'দালালী না রাজপথ, রাজপথ

রাজপথ', 'ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ' সহ নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আনন্দ মিছিল শেষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক ড. মশিউর রহমান খান, ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সুলতান মাহমুদ, হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইহসান ইলাহি সাবিক, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.টি.এম ফয়েজ আহমেদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সভায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা লেজুরভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক দিক এবং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার কথা তুলে ধরেন। এরপর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন ও সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণের উচ্ছ্বসিত ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে পুরো কার্যক্রমের সমাপ্তি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক ড. মশিউর রহমান খাঁন বলেন, এই ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন যেন কোনোভাবেই আমাদের ছাত্রদের ওপর কোনো প্রকার শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করতে না পারে, আমার দিক থেকে আমি সর্বোচ্চ খেয়াল রাখব। আমি শিক্ষার্থী কল্যাণের দায়িত্বে যতদিন আছি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন তোমাদের উপর অপতৎপরতা চালালে আমাকে জানাবা। আমরা সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। 

ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সেটার জন্য তোমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তোমরা নিজেরা একত্রিত হয়ে একটি সংগঠন খুলতে পারো যার মাধ্যমে তোমরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারো রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস উদযাপন হিসেবে। আর একটি দেয়াল গড়তে পার যেখানে থাকবে ছাত্র রাজনীতি থাকাকালীন জুলুমের শিকার হওয়া ছাত্রদের অনুভূতি ও কথামালা। এর মাধ্যমে পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও দেখবে যে ইতিপূর্বে রাজনীতি থাকাকালীন যা যা ঘটেছিল। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইহসান ইলাহি সাবিক বলেন, এই বুটেক্সে ছাত্ররাজনীতি আমাদের দিয়েছে হল দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছাত্রদের র‍্যাগ, নির্যাতন ও পুলিশের হাতে মেরে তুলে দেওয়া। আমরা কি এইসব ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে দেবো? আমি অন্তত দেবো না। আমরা ছাত্র শিক্ষক সকলে মিলে ক্যাম্পাসের এই পরিবেশটা বজায় রাখতে চাই। আমরা রাজনীতি করবো না কিন্তু সকল অপতৎপরতা মোকাবেলা করবো। আমরা কোন দিন বুটেক্সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে দেবো না। 

ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সারোয়ার হোসেন সামি বলেন, প্রথমে আমাদের দেখতে হবে যে ছাত্র-রাজনীতি আমাদের কী দিয়েছে? হল পাওয়ার জন্য অসুস্থ জোনাল পলিটিক্স, যেটার কারণে আমরা আমাদের বৈধ হলের সিট থেকে বঞ্চিত থেকেছি দিনের পর দিন।জোর করে ক্লাস-পরীক্ষা অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক স্লোগানে বাধ্যকরণ করা হতো আর ন্যায়ের কথা বললে শিবির, জঙ্গি ট্যাগিংয়ের  শিকার হতাম। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরেও বুটেক্সের নাম ব্যবহার করে অনেকেই রাজনীতি অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসন যেন সেসবের প্রতি দৃঢ় অবস্থান নেয়। আমরা কখনোই চাইনা ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে সেই জঘন্য সংস্কৃতিগুলো পুনরায় ফিরে আসুক। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বুটেক্সে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের এক বছরেও রাজনীতি মুক্ত করতে পেরেছি কিনা আমরা এখনো নিশ্চিত না, কেননা এই এক বছরে বুটেক্সের বাইরের বেশকিছু গোষ্ঠী এবং অভ্যন্তরের বেশকিছু সংগঠন চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করানো যায়। এমন অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের একতাবদ্ধ হওয়া খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন আগে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের বিচারিক প্রতিবেদন এখনো শিক্ষার্থীদের সামনে পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করা হয়নি, যা হতাশাজনক। এখনো টেকসু না হওয়ায় এখন এমন একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবিগুলো জানাতে পারব। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আজ এই দিনটি আমাদের পুরো বুটেক্সের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো আজ মিছিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মিছিলে অংশগ্রহণ করে নি। কিন্তু রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে সবার জন্য। তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেককে প্রকাশ্য রাজনীতি করতে দেখা গেলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যাবস্থা নিতে চায় না। এছাড়াও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়োমের অভিযোগ পাওয়া যায় যা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছে। কিন্তু স্বাধীন বুটেক্সে এটা কাম্য নয়।

উল্লেখ্য, গতবছর একইদিনে শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভার জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন, ছায়া সংগঠন এবং এর কার্যক্রমের সাথে সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

সম্পর্কিত