জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম সিনেট অধিবেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিনেট অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
সিনেট অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

আজ (২৮ জুন ২০২৫) শনিবার ১০.৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে চেয়ারম্যানের অভিভাষণে একথা বলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুণগত, মানসম্পন্ন, জ্ঞাননির্ভর, সৃজনশীল, দক্ষতাভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিতে ব্যাপক সংস্কারমূলক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

প্রফেসর ড. আমানুল্লাহ বলেন, একমাত্র সময়োপযোগী দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশে ও দেশের বাইরে ভালমানের ও আকর্ষণীয় বেতনের চাকরির সুযোগ এবং অধিকতর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, স্কিল বেইজড কারিকুলাম প্রণয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা গড়ে তোলা গেলে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত কোর্সের সাথে অন্তত দুইটি প্রফেশনাল/কারিগরি/ভোকেশনাল কোর্স যুক্ত করে কারিকুলাম সংস্কার করা হচ্ছে।

সিনেট অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান করতে গিয়ে ড. আমানুল্লাহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন কারিকুলাম কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী ভবিষ্যতে পেশা নির্বাচনে পরামর্শ প্রদানের জন্য অধিভুক্ত কলেজসমূহে ক্যারিয়ার ক্লাব গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে ইণখঈ ঈধৎববৎ ঈবহঃবৎ এর সাথে গড়ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। গড়ট অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে ইণখঈ ১০০টি কলেজে ক্যারিয়ার ক্লাব গঠনের জন্য রুম তৈরি করে দেবে। যার প্রথমটি চালু হয়েছে রাজধানীর লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজে।

উপাচার্য বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে, যা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কারিকুলাম সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা ঊীধসরহধঃরড়হ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস (ঊগঝ) এর আওতায় আনা এবং কলেজ র‍্যাংকিং, মডেল কলেজ নির্বাচন ও ভাইস চ্যান্সেলর এ্যাওয়ার্ড প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নামে বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, “প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এর অংশ হিসেবে বগুড়া ও হবিগঞ্জে নতুন আঞ্চলিক কেন্দ্র চালু এবং কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। হবিগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হচ্ছে জানিয়ে প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, দেশের সব জেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংবিধান, আইন, ভাষা, শিক্ষা, পরিবেশ ও উন্নয়ন ভাবনাসহ উচ্চতর মানববিদ্যা ও যুগোপযোগী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২২৬৮টি। এর মধ্যে ৮৭৯ টি অনার্স কলেজ (৩৭৫টি সরকারি কলেজ এবং ৫০৪টি বেসরকারি কলেজ)। এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে যা দেশের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭০ ভাগ। অধিভুক্ত কলেজে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ০১ লাখ। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নত ও সুযোগ-সুবিধার পথ তৈরি করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে একাডেমিক এক্সচেঞ্জ ও সহযোগিতামূলক যৌথ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ৩১টি বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স পড়ানো হয়। এর সাথে কৃষি, মৎস্য, স্বাস্থ্য ও কারিগরি বিষয়ক শিক্ষা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ নদীমাতৃক বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ, যার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। বাস্তব বিবেচনায় কলেজগুলোতে বিবাহিত ছাত্রীদের সন্তানদের জন্য ডে-কেয়ার ও ফিডিং সেন্টার স্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সাইকোলজিস্ট নিয়োগের আহ্বান জানান প্রফেসর আমানুল্লাহ। 

অধিবেশনে ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জন্য ৬৯০ কোটি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার রাজস্ব ব্যয় সংবলিত প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ৪১৭ কোটি ০৩ লক্ষ ১৯ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। উপাচার্যের অভিভাষণের পর কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ টি এম জাফরুল আযম এই বাজেট উপস্থাপন করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.  এ এস এম আমানুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২৭তম সিনেট অধিবেশনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মোঃ লুৎফর রহমান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ নূরুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদসহ ৭৭ জন সিনেট সদস্য, আমন্ত্রিত সিন্ডিকেট সদস্যগণ (অতিথি হিসেবে), সিনেট সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন  অংশগ্রহণ করেন । 

সিনেট অধিবেশনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিনেট চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। জুলাই বিপ্লবের শহীদ এবং শোক প্রস্তাবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিনেট অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন সিনেট চেয়ারম্যান ও উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।  

সিনেট অধিবেশনের পূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমূখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চ্যান্সেলর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক উন্মোচন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।

সম্পর্কিত