জুলাই শহীদ দিবস- ২০২৫ স্মরণে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বিকেল ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম-২ তে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবির মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুরের শহীদ রাহুল ইসলাম ও শহীদ রুদ্র সেন’র গর্বিত পিতা–মাতা, হাবিপ্রবির প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, হল সুপার, বিভিন্ন শাখার পরিচালকসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস.এম. এমদাদুল হাসান, শহীদ রাহুল ইসলাম ও শহীদ রুদ সেন’র উপর পরিচিতিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক মো. খাদেমুল ইসলাম, সঞ্চালনা করেন সহকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. আবুল কালাম।
আলোচনা সভার শুরুতে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন শহীদ রাহুল ইসলাম ও শহীদ রুদ্র সেন’র পিতা–মাতা। এ সময় শহীদ রুদ্র সেন’র পিতা সুবির সেন বলেন, আমাদের ছেলেকে বার বার নিষেধ করার পরও সে দেশের স্বার্থে আন্দোলনে গিয়েছিল। এখনও মনে হয়, আমার একমাত্র ছেলে বেঁচে আছে, লিখাপড়া শেষ করে সে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।
শহীদ রাহুল ইসলামের পিতা মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমি ছোট্ট একটা মাছের ব্যবসা করি। আন্দোলনে যাওয়ার দিন রাহুল বলেছিল, আব্বা আমার ছাত্র ভাইদের মারি ফেলছে, ঘরে আর বসে থাকা যায়না। মুই কইছু, বাবা হারা ছোট্ট একটা গরিব মানুষ, হারা কোনরকম করি সংসার চালাই, জমি জমা কিছু নাই। এগুলাত যাওয়া যাবেনা বাবা। সেই দিনের বর্ণনা দিতে দিতে তিনি বার বার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এবং অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সকলের নিকট অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা ছাত্র-জনতা সব সময় এক হয়ে থাকেন,আমার মাতো আর যেন কোন বাবা মায়ের বুক খালি না হয়। আপনারা কখনও দল ভাঙ্গা হন না, নাহলে এই ফ্যাসিস্ট সরকার আবার আসবে, আমার মতো হাজারও বাবা মায়ের বুক খালি করবে। আমি একটা কথা বার বার অনুরোধ করি, সব ছাত্র গুলা তোমরা একতা হয়ে থাকো। আমার সন্তানের বুকে যে গুলি চালাইছে আমি তার ফাঁসি চাই। এ সময় তার বক্তব্যে অডিটোরিয়ামে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন মো. সুজন ইসলাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন তপু, হাবিপ্রবি ছাত্র শিবির’র সভাপতি শেখ রিয়াদ, কবিতা আবৃতি করেন আহম্মদ মুহিত।পরিবর্তীতে প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ট্রেজারার মহোদয়ও শহীদ রাহুল ইসলামের বাবার কথার সূত্র ধরে সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, আজকের আলোচনা সভায় শহীদ রাহুল ইসলাম ও শহীদ রুদ্র সেন’র গর্বিত পিতা–মাতা উপস্থিত হয়ে আমাদের গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি বলেন, সবাই এক থাকার বিষয়ে শহীদ রাহুলের বাবা আজ যে কথা বলেছেন, আমরা বড় বড় শিক্ষিত লোকেরাও তা বুঝতে চাইনা। তার এই কথার মূল্য বুঝতে পারলে আমাদের বাংলাদেশ আর কখনও পেছনে থাকবে না। আশা করি তার এই কথা গুলো আপনারা সবাই বুঝবেন ও ধারণ করবেন। তিনি বলেন, রুদ্র সেনের বাবার দিকে তাকান, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি আজ কিভাবে বেঁচে আছে। চিন্তা করেন উনারা দেশের জন্য কি করেছেন, আর আমরা কি করছি, সামান্য ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার জন্য আমরা কত কি করি। তাই এসব থেকে বের হয়ে জুলাইয়ের স্প্রিটটাকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পরিশেষে, শহীদ রাহুল ইসলাম ও শহীদ রুদ্র সেন’র পিতা–মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।