যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান দিবস’ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫’ পালিত হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৫.৩৪ মিনিটে সূর্যোদোয়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর সকাল ৯.০৫ মিনিটে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভবনের পূর্ব পাশে ‘জুলাই চত্বর’, জিমনেশিয়াম হতে টিএসসি’র উত্তরে ডি-চত্বর পর্যন্ত ‘জুলাই ৩৬ সড়ক’ এবং কৃষি অনুষদের দক্ষিণ পাশে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ এর শুভ উদ্বোধন করেন হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা, এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির, বিভিন্ন অনুষদের ডীনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. আবু হাসান, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস.এম. এমদাদুল হাসান, বিভিন্ন শাখার পরিচালকবৃন্দসহ অন্যান্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। পরবর্তীতে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের নেতৃত্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থান র‌্যালি বের করা হয়, র‌্যালিটি জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস ও এর সামনের মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালি শেষে জুলাই-আগস্টে’র শহিদগণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির। ক্রমান্বয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ডীন কাউন্সিল, হল সুপার কাউন্সিল, সাদা দল, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদ, ইউট্যাব, জিয়া পরিষদ, অফিসার্স ফোরাম, জাতীয়তাবাদী কর্মকর্তা পরিষদ এবং জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদ।

এরপর দিনটি উপলক্ষ্যে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের বাণী বিতরণ করা হয়। বাণীতে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, আজকের দিনে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ সন্তান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, দিনাজপুরের রাহুল ইসলাম ও রুদ্র সেনসহ শত শত শহিদদের, যাঁদের রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন, আমি তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং সকলের আশু রোগমুক্তি কামনা করছি। আজকের এ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসকের পতন ও পলায়নের মধ্য দিয়ে আমরা ফিরে পাই ‘নতুন বাংলাদেশ’। পতিত স্বৈরশাসক যখন এদেশের জনগনের কণ্ঠরোধ করতে গায়েবী ও মিথ্যা মামলা এবং আয়নাঘর নামের বন্দিশালায় আটকে রেখে গোলামির জিঞ্জির পরিয়ে প্রভুর ইচ্ছা বাস্তবায়নে রক্তের হোলি খেলায় মত্ত ঠিক তখনই নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা নিখাদ দেশপ্রেম, অসীম সাহস ও দৃঢ় মনোবলে বলিয়ান হয়ে সুসজ্জিত ও প্রশিক্ষিত পেটুয়া বাহিনী ও দলীয় হেলমেট বাহিনীর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজেদের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন মরণপন লড়াইয়ে। যা রূপ নেয় এক সফল বিপ্লব-এ এবং পতন হয় ইতিহাসের ঘৃণিত স্বৈরশাসকের। তাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগের মহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে অভ্যন্তরিণ ও বৈশ্বিক নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ন্যয্যতা ও সমতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, কল্যাণকর, আত্মমর্যাদাশীল, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্বর্নিভর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় শপথ নিতে হবে। পরাজিত শক্তি আমাদের এই পবিত্র অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য সর্বদা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাই সজাগ থাকতে হবে কোন অবস্থাতেই যেন স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টের দোসররা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির কোন ক্ষতি করতে না পারে। পাশাপাশি, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানামুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে রক্ষা করতে হবে আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমির পবিত্র স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। 

বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সন্ত্রাস, দূর্নীতি দমন এবং বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের সর্বত্র প্রয়োজনীয় সংস্কারের যে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে আমাদের ধৈর্য্য, আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগীতা প্রদান করতে হবে। ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান দিবস’ সফল হোক- সকলের প্রতি এটাই আমার একান্ত প্রত্যাশা।

অতঃপর টিএসসি প্রাঙ্গণে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এর উপর শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১১.২৫ মিনিটে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়। এরপর দুপুর ১২ টায় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষ্যে অডিটোরিয়াম-১ এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। 

আলোচনা সভায় অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান গতবছর এ দিনে নিজের জীবন বাজী রেখে আপনারা সরাসরি এ বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেশের জন্য যেভাবে জীবন বাজী রেখে ফ্যাসিষ্টদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে  পড়েছিলেন আগামী দিনেও আপনারা সেভাবে অবদান রাখবেন। এই গণঅভ্যূত্থানের চেতনা ধারন করলে বাংলাদেশকে আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা এবং কোন যড়যন্ত্র আমাদের অগ্রযাত্রাকে ধামাতে পারবেনা। এরপর, জোহর নামাজ শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদে জুলাই গণঅভ্যূত্থানে শহিদগণের রূহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। 

উল্লেখ্য, দিনটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা ও শিক্ষার্থীদের সকল হল- এ উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়, সন্ধ্যার পর ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন।  
 

সম্পর্কিত