শহীদ শাকিল ও শহীদ আহনাফসহ জুলাই বিপ্লবের শহীদদের খুনিদের বিচার করা এটা আমাদের কাছে আমানাত। আমরা এ আমানাতের খেয়ানত করলে ধ্বংস হয়ে যাব। তাই জুলাইয়ের শহীদদের হত্যাকারিদের বিচারের মাধ্যমে সেই আমানত আমাদের রক্তা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব বলেন, আমরা শেখ পারিবারের দাস-দাসী ছিলাম, সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন আমাদের জুলাইয়ের শহীদেরা। শহীদ শাকিল পারভেজ ও শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহসহ জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক নায়কতন্ত্রের পতন হয়েছে।
রোববার (১০ আগস্ট) আশুলিায়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য সমাপনী অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মতিউর রহমান আকন্দ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অ্যাকটিভিস্ট ও শীর্ষ জুলাই যোদ্ধা আবু সদিক (কায়েম)।
পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানে সমাপনী দিনে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাকিল হোসেন পারভেজের নামে চত্বর এবং শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন ও তাদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ।
সকাল ১১টায় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের নামে চত্বর উদ্বোধনের মাধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শরু হয়। উদ্বোধন করেন শহীদের বাবা মো. বেলায়েত হোসেন। এ সময় প্রধান অতিথি মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, গেস্ট অব অনার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলমসহ বিশেষ অতিথি, প্রধান আলোচক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করেন। এ সময় পর্দা উন্মুক্ত করে লাইব্রেবির নাম ফলক উদ্বোধন করেন শহীদের মাতা মোসা. আসিয়া খাতুন।
অতিথিবৃন্দ দুই শহীদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দু’টি গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। পরে শহীদ শাকিল পারভেজ ও শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহসহ জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকেল ২টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে অনুপম সাংস্কৃতিক সংসদ ও সারগাম সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা জুলাইয়ের গান, দেশাত্মবোধক গান, ইসলামী সংগীত, কাওয়ালি, নাটক ও নাটিকা পরিবেশন করেন।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সেটা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম অনুষ্ঠানে আরও বলেন, ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জুলাইয়ের শহীদদের হত্যাকারীদের বিচারটা একটু দেরিতে হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সঠিক সময়ে তাদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা হবে। আমরা চাইনা ক্যাঙ্গারু কোর্টের বিচারের মতো কোন প্রহসন। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন একটি বিচার। এজন্য আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফ্যাসিবাদে আমলে সবচেয়ে বেশি ভিকটিম ছিল উল্লেখ করে প্রধান আলোচক আবু সদিক (কায়েম) বলেন, ফ্যাসিবাদে আমলে খুনি হাসিনা এবং দিল্লীর যারা দালাল ছিল তারা যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রমাগত নির্যাতন চালিয়েছিল সে সবের মধ্যে অন্যতম হলো এ বিশ^বিদ্যালয়টি। খুনি হাসিনার দালালেরা এ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করেছিল। এ বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ের কারণে তাদের ওপর অনেক নির্যাতন নিপিড়ন চালানো হয়েছিল। এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছেন জুলাইয়ের শহীদেরা।
জুলাই বিপ্লবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী গুরুত্বপূর্ণ ও নিতি নির্ধারনী ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিয়ে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে আমাদের।
১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ছিল টাঙ্গাইলে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর কবর জিয়ারত, শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পবিত্র কোরআন বিতরণ, জুলাই বিপ্লবে নারীদের অবদান শীর্ষক সেমিনার, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি এবং পৃথক ইন্ডোর গেমস প্রতিযোগিতা।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, সিএসই ক্লাব, মোরালিটি অ্যান্ড ইথিক্স ক্লাব, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব, ইইই ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, মিডিয়া ক্লাব ও ছাত্র বিষয়ক বিভাগ এ আয়োজনে সহযোগিতা করে।