দুই যুগ পেরিয়ে ২৮ বছরে পা দিলো গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। কিন্তু এমন একটি ঐতিহাসিক দিনে প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল না কোনো উৎসবের আমেজ। মাত্র একটি আনন্দ র্যালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা, ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল না কোনো সাজসজ্জা কিংবা আনন্দঘন পরিবেশ।
সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় র্যালি। একাডেমিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয় এই ক্ষণস্থায়ী আয়োজন। আনন্দ র্যালিতে অংশ নেন প্রায় ৩৫-৪০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অনেকটাই নগণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাত্র একদিন আগে, ১৩ জুলাই বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ র্যালির নোটিশ জারি করে, যা অনেক শিক্ষার্থী জানতেই পারেননি। হঠাৎ এই ঘোষণায় র্যালির দিন উপস্থিত ছিলেন মাত্র হাতে গোনা কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল প্রায় অনুপস্থিত। এমন দায়সারা আয়োজনে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেন, এটি কোনো উৎসব নয়, বরং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল মাত্র।
ক্যাম্পাসজুড়ে না ছিল ব্যানার-ফেস্টুন, না কোনো আলোকসজ্জা বা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এমন আয়োজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়েন সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সীমিত আয়োজন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন গবির সাবেক শিক্ষার্থী রেহান ইসলাম রোমন। তিনি লেখেন, “মাত্র ৩৫-৪০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তার অংশগ্রহণে আনন্দ র্যালি! এটি কোনো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হতে পারে না। শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছাড়া এমন আয়োজন অর্থহীন। বড় পরিসরে উদযাপন করতে প্রশাসন কেন পারছে না? এটাই প্রশ্ন।”
হতাশা প্রকাশ করে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্য জ্যোতি চক্রবর্ত্তী বলেন, “আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গবি সবসময় নিজেকে ব্যতিক্রমী দাবি করে, কিন্তু আজ তার কিছুই দেখতে পেলাম না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন থাকে আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। এখানে কিছুই হলো না। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার আশা থাকবে, ভবিষ্যতে প্রশাসন এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সকলের, তাই র্যালিতে সবার অংশগ্রহণ কাম্য ছিল। তবে সামনে জুলাই মাসে ‘গণ অভ্যুত্থান’ উপলক্ষে বড় আয়োজন থাকায় এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছোট পরিসরে করতে হয়েছে। ওই প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই ডা. মো. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অংশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এটি ব্যতিক্রমী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় বহন করে আসছে। কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা, গণমুখী দর্শন ও সমাজসেবায় নিয়োজিত শিক্ষার্থী তৈরির লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।