কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আয়োজন করা হলো “এপেক্স অ্যাস্ট্রো অলিম্পিয়াড ২০২৫”-এর কুমিল্লা রিজিয়নের অডিশন সেশন। বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াতে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। আজ সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ২ টায় ব্যাডমিন্টন কোর্টে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, কুবি সায়েন্স ক্লাবের মডারেটর ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব, বিজ্ঞান লেখক আবদুল গফফার রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলাম গবেষণা কেন্দ্রের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শরীফ মাহমুদ সিদ্দিকী এবং এপেক্স অ্যাস্ট্রো অলিম্পিয়াড ২০২৫ এর প্রজেক্ট ডিরেক্টর শাহপার আলম।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, “মহাকাশবিদ্যা ফিজিক্সের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এতে রয়েছে গভীর চিন্তা ও চরম আগ্রহের বিষয়। কসমোলজি নিয়ে তোমরা যত বেশি পড়বে, তত বেশি স্রষ্টাকে উপলব্ধি করতে পারবে। এই অলিম্পিয়াড তোমাদের জটিল সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বাড়াবে। আমি আশা করি, তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন অর্গানাইজেশন যে বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশ্ব যখন পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের পথে, আমরা এখনও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অনেক কাজ শেষ করতে পারিনি। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ সহ আরও বিজ্ঞান ভিত্তিক যে সকল চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করে কৃষিনির্ভর সমাজ থেকে পণ্য ও সেবা রপ্তানির মাধ্যমে আমরা উন্নতির পথে এগোতে পারি।’
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিন বলেন, “মহাকাশ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে সারা দেশে এস্ট্রো অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হচ্ছে। বিজ্ঞান একটি পরিবর্তনশীল বিষয় এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্রমাগত এগিয়ে চলে। আজকের বিজ্ঞান ১০০ বছর পর পরিবর্তিত হতে পারে। এ ধরনের আয়োজন তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তুলবে। ভবিষ্যতেও আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আয়োজন করতে চাই।”
এই অলিম্পিয়াডে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের মোট ১৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। জুনিয়র (স্কুল পর্যায়, ১৪–১৫ বছর) ও সিনিয়র (কলেজ পর্যায়, ১৬–১৮ বছর) এই দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত এই প্রতিযোগিতা শেষে জুনিয়র বিভাগ থেকে ১৫ জন এবং সিনিয়র বিভাগ থেকে ১০ জনকে বিজয়ী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
প্রাথমিক বাছাইয়ে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় (ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি) জাতীয় বাছাই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে জুনিয়র ও সিনিয়র প্রতি বিভাগ থেকে ১৫ জনকে নিয়ে চার দিনের একটি আবাসিক ক্যাম্প করা হবে। চূড়ান্তভাবে পাঁচজনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ নেওয়ার জন্য বাছাই করা হবে, যারা আগামী ২৮তম আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে রাশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বিগত ৩৬ বছর ধরে দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছে। এপেক্স গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এবারের অলিম্পিয়াডের নামকরণ করা হয়েছে "এপেক্স অ্যাস্ট্রো অলিম্পিয়াড ২০২৫"।