বাউবিতে নবনির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘জুলাই জাগরণী’ উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্মৃতিস্তম্ভ ‘জুলাই জাগরণী’ উদ্বোধন। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট
স্মৃতিস্তম্ভ ‘জুলাই জাগরণী’ উদ্বোধন। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) গাজীপুরস্থ মূল ক্যাম্পাসে আজ (৫ আগস্ট ২০২৫) মঙ্গলবার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে নবনির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘জুলাই জাগরণী’-এর শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম সকাল ১০টায় স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, “আমার জানামতে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’  বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থাপন করা হয়। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্র-জনতা এক কাতারে সামিল হয়ে জুলাইয়ের গণআন্দোলনে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন, তাদের চেতনাই আমাদের অনুপ্রেরণা। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তা ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এবং অনিবার্য। জুলাই যোদ্ধাদের ঢেলে দেওয়া বুকের তাজা রক্তের ঋণ ও ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এই ‘জুলাই জাগরণী’ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সাহস, সততা ও আদর্শের পথে এগিয়ে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকার যাতে আর কখনও এই দেশের গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি ধ্বংস করতে না পারে, সে লক্ষ্যে সকলকে সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। বাউবি তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।” উপাচার্য মহোদয় আরো বলেন, পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের বিধ্বংসিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতির অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব। দীর্ঘদিনের অবিচার, দুর্নীতি, দলীয়করণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতান্ত্রিক শূন্যতার যে যন্ত্রণা মানুষ বহন করে চলেছে, তা নিরসনকল্পে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই পরিকল্পনাগুলো হতে পারে কার্যকর হাতিয়ার। " অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন,  অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস পিএইচডি ও বিশেষ অতিথি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম।

জুলাই জাগরণী স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনের পর  উপাচার্য অধ্যাপক ড . এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের নেতৃত্বে ‘জুলাই জাগরণী’ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস পিএইচডি, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিভিন্ন গ্রাফিতি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম গ্রাফিতি স্মরকপত্রে  স্বাক্ষর করে এ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় উপাচার্য বলেন, "এখন থেকে এবারের মতো প্রতি বছর নিয়মিত এ দিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে। গ্রাফিতিতে প্রদর্শিত জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ, ফ্যাসিস্ট কর্তৃক নির্যাতনের যন্ত্রণাদায়ক ভয়াবহ চিত্র এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিভিন্ন দেয়ালে লিখিত ও অঙ্কিত প্রতিবাদের ভাষা সম্বলিত এসব গ্রাফিতি আগামী প্রজন্মের জন্য দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে।"

এরপর মাননীয় উপাচার্য উপস্থিত সকলকে নিয়ে গ্রাফিতি প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। দুঃসহ স্মৃতিময় এসব গ্রাফিতি দেখে উপাচার্য অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম আবেগাপ্লুত হয়ে   জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত  এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য যে, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যথাযোগ্য মর্যাদায় বাউবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাসব্যাপী (৩৬ দিন) আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের আজ ছিল শেষ দিন।

সম্পর্কিত