ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানা আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।সকাল সাড়ে ৮টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটেন উপাচার্য।সকাল ১০টায় সিভাসু অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষাবর্ষ সমারম্ভ’ অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। অনুষ্ঠানে সমারম্ভ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তোমরা অনেক স্বাধীনতা ভোগ করবে। কিন্তু দায়িত্বশীলতার সাথে সেই স্বাধীনতা ভোগ করতে হবে। পিতামাতারা অনেক কষ্ট করে তোমাদের লালন করেছেন। তাঁরা তোমাদেরকে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসছেন। দেশের একটা উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমরা পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছো। তাই আমি মনেকরি পিতামাতার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন পূরণে তোমরা যথাযথভাবে চেষ্টা করবে। পড়াশোনা করবে। নিজেদের বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবে।’ শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তোমরা রাজনীতি সচেতন হবে। অবশ্যই আমি সেটা চাই। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক প্রবণতাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে পরিহার করবে। রাজনৈতিক দল যেন তোমাদেরকে পরিচালিত না করে। তোমরা নিজেরা যেন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে পরিচালনা করতে পারো, সেভাবেই নিজেদেরকে গড়ে তুলবে।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন সিভাসু হলো দেশের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বমানের পাঠ্যসূচি, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি এবং ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশনের মাধ্যমে এখানকার শিক্ষার্থীরা অর্জন করছে আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সমারম্ভ বক্তা প্রফেসর ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম বলেন,এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব বিষয়ে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে, তার সবগুলোই অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং এইগুলোর চাহিদা বিশ্বব্যাপী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের সরাসরি দেশের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখার সুযোগ রয়েছে। তোমরা নিজেদেরকে সবসময় জ্ঞানচর্চা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রাখবে। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন থেকে নিজেদের বিরত রাখবে। তাহলে তোমরা জীবনে সফলকাম হবে।
সিভাসুর পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশেদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. ফেরদৌসী আকতার, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শেখ আহমাদ আল নাহিদ এবং ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন প্রফেসর গৌতম কুমার দেবনাথ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
একই ভেন্যুতে বিকাল ৪ ঘটিকায় সিভাসুর উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনাসভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভাসুর প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর ড. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ। বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব মো: আবদুল করিম, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ, দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী, সিভাসুর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. সাইফুদ্দীন, প্রফেসর ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, ডা. মো: ফরহাদ হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব সাহেদুল আলম কাদেরীর পরিবারের সদস্য মোর্শেদুল আলম কাদেরী।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং শিক্ষাবর্ষ সমারম্ভ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী আয়োজিত অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-বৃক্ষরোপণ, ফ্রি ভেটেরিনারি ক্যাম্প, রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ফ্রি ফিশ কন্সালটেশন ক্যাম্প, হেলদি লাইফ ক্যাম্প, ওয়ান হেলথ ইয়ং ভয়েস এবং আইভিএসএ-এর কার্যক্রম, এভারকেয়ার হসপিটাল কর্তৃক স্বাস্থ্য বিষয়ক ফ্রি ক্যাম্প, প্রীতিভোজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৭ আগস্ট জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে সরকার তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ-কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে। তৎপূর্বে ১৯৯৫-১৯৯৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়।