সামুদ্রিক স্পঞ্জই পৃথিবীর প্রথম প্রাণী

নিজস্ব প্রতিবেদক।
সামুদ্রিক স্পঞ্জ— প্রতীকী প্রাণি। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট।
সামুদ্রিক স্পঞ্জ— প্রতীকী প্রাণি। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট।

পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সূচনা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। কেউ বলেন, এককোষী জীব থেকে প্রাণের শুরু, আবার কেউ মনে করেন সামুদ্রিক জীব থেকে এসেছে বহুকোষী প্রাণ। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর প্রথম প্রাণী ছিল প্রাচীন সামুদ্রিক স্পঞ্জ।

এমআইটির একদল গবেষক প্রায় ৫ কোটি ৪১ লাখ বছরেরও বেশি পুরোনো শিলায় থাকা রাসায়নিক জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। তাদের দাবি, স্পঞ্জ পৃথিবীতে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের অনেক আগেই বিদ্যমান ছিল—যখন জটিল জীবের দ্রুত বিকাশ ঘটেছিল। এই আবিষ্কার প্রাণের ইতিহাস সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।

গবেষকরা ওমান, পশ্চিম ভারত ও সাইবেরিয়ার বিভিন্ন শিলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেন। সেখানে তারা ‘স্টেরেনস’ নামক একটি বিশেষ বায়োমার্কার খুঁজে পান, যা সাধারণত জটিল প্রাণীর কোষঝিল্লিতে পাওয়া যায়। এই রাসায়নিক চিহ্নের গঠন এমন যে, এটি কেবল ডেমোস্পঞ্জ নামক সামুদ্রিক প্রাণী থেকেই উৎপন্ন হতে পারে। এমআইটির বিজ্ঞানীদের মতে, এই বায়োমার্কারই পৃথিবীর প্রথম প্রাণীর আণবিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করছে।

গবেষক রজার সামন্স বলেন, “আমরা তিনটি শক্ত প্রমাণ পেয়েছি যা একে অপরের সঙ্গে মিলে যায়। এর সবকটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে—প্রথম প্রাণী ছিল স্পঞ্জ।” তিনি আরও যোগ করেন, প্রাচীন এই স্পঞ্জগুলো সমুদ্রের পানি ছেঁকে পুষ্টি সংগ্রহ করত এবং সেইসঙ্গে পৃথিবীর মহাসাগরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করেছিল।

এই নতুন তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর আদিম প্রাণ ছিল নরম-দেহী সামুদ্রিক স্পঞ্জ, যেগুলো কোটি কোটি বছর আগে থেকেই জলের গভীরে টিকে ছিল। এমআইটির গবেষণা এখন বিজ্ঞানমহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি পূর্ববর্তী ‘ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণ-নির্ভর’ তত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই আবিষ্কার প্রকাশিত হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে, যা জীববিজ্ঞানের গবেষণায় এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

সম্পর্কিত