গ্রামের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন আহসান মাসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক।
আহসান হাবিব মাসুম তার গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, জীবন উৎসর্গে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট।
আহসান হাবিব মাসুম তার গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, জীবন উৎসর্গে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন। ছবি: ক্যাম্পাস রিপোর্ট।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে এক অদম্য শিক্ষক শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন, যিনি নিজের বিলাসী জীবন ছেড়ে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করছেন। আহসান হাবিব মাসুম ১৯৭০ সালের ৭ জানুয়ারি গোয়ালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি মতিঝিল মডেল স্কুল ও তেজগাঁও কলেজে শিক্ষা লাভ করেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯৯ সালে তিনি গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেই সময় গ্রামের স্কুল ছিল ভেঙেচুরে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম এবং শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না। এই সব পরিস্থিতির মাঝেও আহসান স্যার সিদ্ধান্ত নেন বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন। তার বিশ্বাস, শিক্ষাই সমাজ পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি।

নিজস্ব সঞ্চয় ও পরিবারের সহায়তায় তিনি বিদ্যালয়টি সংস্কার করেন, বই-খাতা বিতরণ করেন এবং প্রায়শই নিজ হাতে ছাত্রদের খাবার রান্না করেন। শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে তিনি কখনও কোনো স্বার্থ দেখাননি। ২০২৪ সালে বিদ্যালয় সরকারিভাবে এমপিভুক্ত হলে তাকে ৬,০০০ টাকা বেতন দেওয়া হলেও তিনি সেটিও বিদ্যালয় ও দরিদ্র ছাত্রদের উন্নয়নে ব্যবহার করেছেন।

আহসান মাসুমের ত্যাগের গল্প শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, বরং সমাজের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি দেখিয়েছেন যে ব্যক্তি জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যও ত্যাগ করে যদি লক্ষ্য হয় শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক উন্নয়ন। তাঁর এই উদ্যোগে গ্রামের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, এবং কমিউনিটিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

আহসান স্যারের জীবন এক অনুপ্রেরণার কাহিনী যা আমাদের শেখায় যে সৎ পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে যে কেউ সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তার ত্যাগ ও দৃষ্টিভঙ্গি গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের জীবনে আলো জ্বালিয়েছে।

সম্পর্কিত