পে কমিশনে সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ বেতন দেড় লাখ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ফটো। ছবি: সংগৃহীত
ফাইল ফটো। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ননক্যাডার কর্মকর্তাদের বেতন ও সার্ভিস সংক্রান্ত বৈষম্য দূর করতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এতে যথাসময়ে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব না হলে সব প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের জন্য চাকরি জীবনে অন্তত চারটি পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডস্কেল দেয়ার ব্যবস্থা করা অথবা সুপার নিউমেরিক পদ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়াও সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন তারা।প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ননক্যাডার কর্মকর্তাদের বেতন ও সার্ভিস সংক্রান্ত বৈষম্য দূর করতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এতে যথাসময়ে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব না হলে সব প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের জন্য চাকরি জীবনে অন্তত চারটি পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডস্কেল দেয়ার ব্যবস্থা করা অথবা সুপার নিউমেরিক পদ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়াও সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন তারা।

রোববার বেতন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশ সম্মিলিত সরকারি কর্মকর্তা পরিষদের (বাসসকপ) প্রতিনিধিদল।

কর্মকর্তাদের সুপারিশের মধ্যে আরো রয়েছে, সন্তানদের শিক্ষা ভাতা সন্তান প্রতি ৩ হাজার টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা; বেতন ধাপ সর্বোচ্চ ১২-১৩টির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা; সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত ১:৫ এ সীমাবদ্ধ রাখা। চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে বর্তমান পারিবারিক আর্থিক সহায়তা আট লাখ টাকার স্থলে তা পনের লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হল; বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে সব ধরনের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ যৌক্তিকভাবে উন্নীত করা এবং অনুদান মঞ্জুর বিবেচনায় ননক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কোনরূপ বৈষম্য সৃষ্টি না করা; বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন ও কর্মপরিধি সম্প্রসারণ করে প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়নে একে একটি ট্রাস্টে রূপান্তর করা।

এ ছাড়াও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ননক্যাডার কর্মকর্তাদের বেতন ও সার্ভিস সংক্রান্ত বৈষম্য দূরীকরণে কর্মকর্তারা আরো সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পারিবারিক, সমাজিক এবং অর্থনৈতিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে আসন্ন জাতীয় পে-স্কেল ২০২৫ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশমালায় বিবেচনার জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।

সুপারিশগুলো হলো- (মোট ৭টি) চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে সব প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের সিনিয়র স্কেল বা বর্তমান ৬ষ্ঠ গ্রেডস্কেল দেয়া হয়; যথাসময়ে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব না হলে সব প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের জন্য চাকরি জীবনে অন্তত চারটি পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডস্কেল দেয়ার ব্যবস্থা করা অথবা সুপার নিউমেরিক পদ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তাদের যথাসময়ে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা অথবা ৪, ৮, ১২, ও ১৬ বছরে সিলেকশন গ্রেড অথবা উচ্চতর গ্রেডস্কেল দেয়া; বর্তমান ক্যাডার সার্ভিস ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে কাজের ধরণ অনুযায়ী একাধিক গুচ্ছ সার্ভিস গঠন করা যেতে পারে।

যেমন-উচ্চ শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, এবং কারিগরি শিক্ষা সমন্বয়ে শিক্ষা ও উন্নয়ন নামে গুচ্ছ সার্ভিস ও ক্যাডার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা; বর্তমান ব্যবস্থায় ক্যাডার সার্ভিসের যুগ্মসচিব বা তদোর্ষ পদের যথাক্রমে, ১৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ সংখ্যক পদে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের (যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী) মধ্য থেকে কমপক্ষে ১৬ হতে ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের জন্য পাশে প্রবেশের ব্যবস্থা করা; ননক্যাডার কোন কর্মকর্তা সরকারি চাকরিতে তাঁর বেতনস্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর পর অন্তত: আরও এক বছর চাকরীর মেয়াদ থাকলে ঐ কর্মকর্তাকে তাঁর বেতনস্কেলের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছানোর এক বছর পরে পরবর্তী উচচতর গ্রেডস্কেল প্রদান করতে হবে। এর মাধ্যমেও চাকরি জীবনে একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি জনিত বঞ্চনা ও আর্থিক বৈষম্যের মাধ্যমে তাঁর ক্ষতি অনেকটা লাঘোভ হবে।

আরো সুপারিশ করা হয়েছে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৮ম পে-স্কেলের অনুচ্ছেদ ৮এর প্রভিশন অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পরিচয় হওয়ার কথা স্ব-স্ব অর্জিত গ্রেডস্কেল অনুযায়ি, কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চাকরিতে প্রাপ্য সুবিধাদি হতে কর্মকর্তাগণ বঞ্চিত হয়েছেন। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশে বিষয়টি বিবেচনা করে চাকরিতে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা একান্ত প্রয়োজন; জনপ্রশাসন থেকে প্রণিত ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের 'বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ' নীতিমালা বাতিল বা সংশোধনের ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ অবারিত করা এখন সময়ের দাবি। একজন কর্মকর্তা সরকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উন্নত মানবসম্পদ হিসেবে নিজেকে গড়েতোলতে পারেন বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে, সব প্রথম শ্রেণির ননক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য পৃথকভাবে ‘পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন’ নামে মধ্যম বা দীর্ঘ মেয়াদি একটি সমন্বিত পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও কমিশনের কাছে বেতন বৈষম্য নিরসনে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। তা হলো- (মোট ১৫টি) সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অবসরে গমনের বয়স ২৫ বছরের স্থলে ২০ বছর করা; সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ১০০ শতাংশ পেনশন সুবিধা দেয়া; বাঙলা নববর্ষ (উৎসব) ভাতা ১০০ শতাংশ করা; সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ২০ বছর বা ততোধিক হলে আনুতোষিকের হার ১ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা করা, যা বর্তমানে ২৩০ টাকা হিসেবে নির্ধারিতে আছে; ল্যাম্পগ্রান্ট সুবিধা ১৮ মাসের মূল বেতনের পরিবর্তে ২৪ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ দেয়া; একজন কর্মকর্তা নিজসহ তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মা এর জন্য স্বাস্থ্য ও ঝুঁকি বিমার প্রবর্তন করা; গৃহ নির্মাণ ঋণের পরিমাণ (ব্যাংক রেটে) গ্রেড ভেদে বর্তমান থেকে আরো বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা গেলো; সব প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ২০ বছর চাকরি পূর্তিতে গাড়ি ক্রয়ের জন্য ৩০ লাখ টাকা লোন (বিনা সুদে) দেয়ার ব্যবস্থা করা; যেহেতু তিন বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা দেয়া হয়ে থাকে সেহেতু ২টি মূল বেতনের সমপরিমাণ বিনোদন ভাতা দেয়া, অথবা দুই বছর পর পর এ ভাতা দেয়ার করার সুপারিশ করা হলো।

সম্পর্কিত