নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ট্রিপল-ই বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন।অভিযোগ উঠেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেডিটে সহপাঠীকে ধর্ষণ, বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে বুয়েটের তট্রিপল-ই বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র শ্রীশান্ত রায়ের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ থেকে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের সামনে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, রেডিটের স্ক্রিনশটে নারী সহপাঠীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সে ধর্ষণ করেছে। এছাড়াও বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে সে। এমন একজন আমাদের সহপাঠী হতে পারেনা। আমাদের দাবি আমরা তার বহিষ্কার চাই এবং তার ধর্ষণের বিচার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েট প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে ঘোষণা দেন, শ্রীশান্ত রায়কে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বহিষ্কার আদেশ জারি করেছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা শোনার পর ‘না না’ বলে ওঠেন। তারা ওই শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তোলেন। তখন অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ বলেন, ‘স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল করার ক্ষমতা আমার নেই, আমি উপাচার্যের নির্দেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তার নামে মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এবং তাকে গ্রেফতার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদিও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মামলা করার কথা, তবে আমরা ছাত্রদের কথা বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’এদিকে এ ঘটনায় সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েমও। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ফেসবুক পোস্টে অভিযুক্তের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে ডাকসু ভিপি বলেন, ‘স্বঘোষিত ধর্ষক এবং মুসলিম নারীদের নিয়ে চরম অবমাননাকর মন্তব্যকারী বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বুয়েটে চলমান আন্দোলনের কোনো মিডিয়া কাভারেজ নেই। উপরন্তু, বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জেলে ঢুকানোর হুমকি-ধমকি দিয়েছে রেপিস্টের বাবা।’
তিনি লেখেন, ‘ধর্ষণ, নারী অবমাননা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার মতো গুরুতর অভিযোগের স্বত্বেও রাষ্ট্র তার যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। শহিদ আবরার ফাহাদের রক্তে রঞ্জিত ক্যাম্পাস এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে কোনো ধর্ষক, নিপীড়কের ঠাঁই হবে না।’